আল-আকসা মসজিদ আরবিতে ‘ٱلْـمَـسْـجِـد الْاَقْـصَى’ মসজিদুল আকসা বা বাইতুল মুকাদ্দাস নামেও পরিচিত। মসজিদটি জেরুজালেমের পুরনো শহরে অবস্থিত ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ। এটির সাথে একই প্রাঙ্গণে কুব্বাত আস সাখরা, কুব্বাত আস সিলসিলা ও কুব্বাত আন নবী নামক স্থাপনাগুলো অবস্থিত। স্থাপনাগুলোসহ এই পুরো স্থানটিকে হারাম আল শরিফ বলা হয়।
এছাড়াও স্থানটি ‘টেম্পল মাউন্ট’ বলে পরিচত এবং ইহুদি ধর্মে পবিত্র বলে বিবেচিত হয়। ইসলামের বর্ণনা অনুযায়ী মুহাম্মদ (সা) মিরাজের রাতে মসজিদুল হারাম থেকে আল-আকসা মসজিদে এসেছিলেন এবং এখান থেকে তিনি ঊর্ধ্বাকাশের দিকে যাত্রা করেন।ইতিহাসবিদ পণ্ডিত ইবনে তাহমিয়ার মতে, আসলে সুলায়মান এর তৈরি সম্পূর্ণ উপাসনার স্থানটির নামই হল মসজিদুল আল-আকসা। মুহাদ্দিসগণ এই বিষয়ে একমত যে সম্পূর্ণ উপাসনার স্থানটিই ইসলামের নবী সুলাইমান (আঃ) তৈরি করেছিলেন যা পরবর্তীতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
মুসলমানরা বিশ্বাস করে, নির্মাণের পর থেকে এটি ঈসা (আঃ) (খ্রিস্টধর্মে যিশু) সহ অনেক নবীর দ্বারা এক আল্লাহকে উপাসনার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। এই স্থান মুসলিমদের প্রথম কিবলা । হিজরতের পর কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণে কাবা নতুন কিবলা হয়। বর্তমানে ‘আল-আকসা’ মসজিদ বলতে বোঝাায় কিবলি মসজিদ, মারওয়ানি মসজিদ ও বুরাক মসজিদ এর সমন্বয়। যা হারাম আল শরীফ এর চার দেয়াল এর মধ্যেই অবস্থিত।
মক্কার মসজিদে হারামের পরেই পবিত্র কোরআনে যে মসজিদটির নাম উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি হলো মসজিদে আল আকসা
পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত, যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।’
মসজিদে আকসা পৃথিবীতে নির্মিত দ্বিতীয় মসজিদ। পবিত্র কাবাঘর নির্মাণের চল্লিশ বছর পর এটি নির্মিত হয়। হজরত আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস থেকে এ সম্পর্কে জানা যায়। তিনি একবার রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, পৃথিবীর বুকে প্রথম মসজিদ কোনটি?
রাসূল (সা.) উত্তরে মসজিদে হারামের কথা উল্লেখ করেন। এরপর তিনি রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন এর পরে নির্মিত মসজিদ কোনটি। রাসূল (সা.) উত্তরে মসজিদ আল-আকসার কথা বলেন। মসজিদ দুইটির নির্মাণের মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান জানতে চাইলে রাসূল (সা.) জবাবে বলেন, এদের মধ্যে ব্যবধান চল্লিশ বছরের।
মিরাজের রাতে রাসূল (সা.) সকল নবী-রাসূলকে নিয়ে আল-আকসা মসজিদে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেছিলেন। রাসূল (সা.) এর ইমামতিতে এই নামাজ আদায় করা হয়।
এই মসজিদের এক রাকাত নামাজ পঞ্চাশ হাজার রাকাত নামাজের সমান। রাসূল (সা.) এর এক হাদীসে বলা হয়েছে- ‘একজন ব্যক্তির তার নিজ ঘরে আদায় করা নামাজের পুরস্কার ওই নামাজের সমান, নিকটস্থ মসজিদে নামাজের পুরস্কার পঁচিশ গুণ, জুমা মসজিদের নামাজ পাঁচশত গুণ, আল- আকসা মসজিদে পঞ্চাশ হাজার গুণ, মসজিদ নববীতে পঞ্চাশ হাজার গুণ এবং মসজিদ আল-হারামে এক লক্ষ গুণ পুরষ্কার রয়েছে।’ (ইবনে মায্হা)
৬৩৮ ঈসায়ীতে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা.)-এর খিলাফতকালে পুরো বাইতুল মুকাদ্দাস এলাকা মুসলমানদের আয়াত্বে চলে আসে। ১০৯৬ সনে খৃষ্টান ত্রু সেরগণ পুরো সিরিয়া ও ফিলিস্তিন দখল করার পর মসজিদে আকসা-এর ব্যাপক পরিবর্তন করে একে গীর্জায় পরিণত করে ফেলে।তারপর ১১৮৭ সালে মুসলিম বীর ও সিপাহসালার সুলতান সালাহ উদ্দীন আইয়ুবি জেরুজালেম শহর মুসলমানদের অধিকারে নিয়ে আসেন। সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবির হাতে পরাজিত হওয়ার পর খৃস্ট শক্তি কিছুটা পিছু হটলেও ইয়াহুদী চক্র বায়তুল মুকাদ্দাসের প্রতি লোলুপ দৃষ্টি রাখে। এবং তারা ফিলিস্তিন থেকে নিয়ে সুদূর মদিনা পর্যন্ত সমগ্র মুসলিম এলাকা নিয়ে বৃহত্তর ইসরাঈল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করে বসে।
এরই প্রেক্ষিতে ১৯১৭ সনে ইংরেজরা ফিলিস্তিনে প্রবেশ করে ও ১৯২০ সনে সেখান পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে এবং ‘স্যার হার্বাট স্যামুয়েল’ নামক একজন ইয়াহুদীকে সেখানে বৃটিশ কমিশনার নিযুক্ত করে। এই জমি কেনায়র ফলে বহিরাগত ইয়াহুদীদের জন্য ফিলিস্তিনের দরজা খুলে যায়। সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা ইয়াহুদীবাদী উগ্র সংস্থাগুলোকে ফিলিস্তিনে বসবাস ও জমি কেনার জন্য কোটি কোটি ডলার প্রদান করে। ফলে অতি অল্প দিনের মধ্যে বহু সংখ্যক ইয়াহুদী ফিলিস্তিনে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে।১৯৪৮ সনের ১৫ ই মে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে যায়নবাদী অবৈধ ইসরাঈল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়।