বৈশ্বিক মহামারী কোভিট-19 এ আক্রান্ত হয়ে গোটা জাতি যেখানে স্তম্ভিত। স্বজন হারানো শোকে আমরা তাই কাতর। আর এই শোককে শক্তিতে পরিনত করে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে চলেছি। এমতোবস্তায় দীর্ঘ্ 14 মাস ধরে বন্ধ রয়েছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এমন আপদকালীন পরিস্থিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যাতে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ না হারায় এবং অভিভাবক মন্ডলী যাতে তাঁদের সন্তানদের পড়াশুনা নিয়ে কোন রকম দুশ্চিন্তায় না পড়েন এমন বিষয় মাথায় রেখে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় মন্দির ভিত্তিক ব্যতিক্রমি শিক্ষা কার্য্ ক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
প্রতিটি কেন্দ্রের শিক্ষকগণ এই মহামারীতে ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্য বিধি সর্ম্পকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সুপরামর্শ্ দেন। আপদকালীন সময়ে শিশুদের মানসিক বিকাশে যাতে বাধার সৃষ্টি ও করোনা আতঙ্কে ভীত না হওয়ার জন্য সচেতনতামুলক সার্বিক পরামর্শ্ প্রদান করেন। শিশুরা যেন সব সময় খেলাধুলা ও হাসি খুশির মধ্যে থাকতে পারে সে বিষয়ে লক্ষ রাখার জন্য অভিভাবকদের বুঝিয়ে বলেন। গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহিত উদ্যোগ সংসদ বাংলাদেশ টিভি চেনেলে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার ক্লাশ নেওয়া হয় তা দেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের সবিনয় অনুরোধ করেন। শিশুদের যাতে স্বাস্থ্য হানি না ঘটে সেজন্য পুষ্টিকর শাক সবজি এবং ভিটামিন সি সম্বৃদ্ধ খাওয়ানোর জন্য পরামর্শ্ দেন।এ বিষয় সম্পর্কে শাল্লা উপজেলার আনন্দপুর শ্রীশ্রী চন্ডিদাস আউলিয়া বাবার মন্দির শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষিকা সুমা রানী দাশকে তাঁদের শিক্ষা কার্য্ ক্রম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই জাতির জনকের যোগ্য উত্তরসূরী, জাতির পিতার অসাম্প্রদায়িক চেতনার রক্ত যার শরীরে বহমান সেই মমতাময়ী মা, মানবতার জননী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। যার কল্যাণে এই মন্দির ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্য্ ক্রম চলমান রয়েছে। আমি ধন্যবাদ জানাই মন্দির ভিত্তিক শিক্ষা কার্য্ ক্রমের প্রকল্প পরিচালক ( অতিরিক্ত সচিব) রঞ্জিত কুমার দাশ মহোদয়কে। যাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম ও সঠিক দিক নির্দেশনার ফলে এই প্রকল্পটি এতদুর এগিয়েছে। তিনি বলেন, হিন্দু ধর্মীয় কল্যান ট্রাস্ট, সুনামগঞ্জ- এর সহকারী প্রকল্প পরিচালক রবীন আচার্য্য্ স্যারের বিচক্ষনতা ও আন্তরিকতায় অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা হোম ভিজিটের মাধ্যমে শিক্ষা কার্য্ ক্রম পরিচালনা করে আসছি। যার ফলশ্রুতিতে ভবিষ্যত প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারছি শেখ মুজিবের আদর্শ্ । শিক্ষার্থীদের জানাতে পারছি মুক্তি যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস। আমরা বুঝতে পারছি যে, মহান মুক্তিযুদ্ধ , বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী ছোট ছোট শিশুরা নীতি নৈতিকতার শিক্ষা পাচ্ছে। নিজের ধর্ম্ কে জানা এবং অন্যের ধর্ম্ কে সম্মান করতে শিখতে পারছে। বড়দের সম্মান করতে শিখছে। যা ভবিষ্যতে সুনাগরিক গড়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরূত্তপূর্ণ্ ভূমিকা পালন করবে বলে আমি মনে করি।
এ বিষয়ে আরও জানার জন্য হিন্দু ধর্মীয় কল্যান ট্রাস্ট, সুনামগঞ্জ- এর সহকারী প্রকল্প পরিচালক রবীন আচার্য্য্র সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, মন্দির ভিত্তিক শিক্ষা কার্য্ ক্রমটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিকট খুবই জনপ্রিয় । এই কার্য্ ক্রমের মাধ্যমে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। আমি মনে করি এই কার্ক্রানমের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে সামাজিক,নৈতিক ও ধর্মীয় অনুভুতি জাগ্রত হবে। ফলে সামাজিক অবক্ষয়, হিংসা বিদ্ধেষ দুরিকরনে গুরুত্বপূর্ন্ ভুমিকা রাখবে বলে তিনি জানান।