প্রতারক চক্র কোভিড-১৯ এর টেস্টিং এ চাকুরী নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। চক্রগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেই প্রতারণার প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করে।
প্রতারণার লক্ষ্যে দুই প্রতারক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিবের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া পরিপত্র তৈরি করে। এরপর করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের কথা বলে দৈনিক আড়াই হাজার টাকা বেতনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে তারা টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।
কিন্তু বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আসায় প্রতারকদের পরিকল্পনা সফলতা পায় নাই। সেই সাথে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।
এর আগে কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর দিকে জেকেজি হেলথ কেয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠান রোগীদের নমুনা সংগ্রহে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন পায়। কিন্তু সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষা না করেই তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো রিপোর্ট দিতে শুরু করে। পরবর্তী সময় এ প্রতারণা ফাঁস হলে এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হয়।
তেমনি প্রতারণার দায়ে রিজেট হাসপাতালের মালিককে গ্রেফতার করেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
তথ্য সূত্রমতে, গত ১৯ জুলাই টিকেএস হেলথকেয়ার লিমিটেড নামের নামসর্বস্ব একটি প্রতিষ্ঠান কোভিড-১৯ সরঞ্জাম ক্রয় ও জনবল নিয়োগে অনুমোদন পেয়েছে-এমন একটি পরিপত্র সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব জাকিয়া পারভীনের স্বাক্ষর কপি করে প্রতারকরা নকল পরিপত্র তৈরি করে। তারপর সেটি মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়।
উক্ত ভুয়া পরিপত্রে বলা হয়-‘১১ জুলাইয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশব্যাপী কোভিড-১৯ র্যাপিড টেস্টের সব সরঞ্জাম (ডিভাইস) আসার পর এবং দক্ষ জনবল নিয়োগ দিয়ে প্রাথমিকভাবে র্যাপিড অ্যান্টিজেন কিট দিয়ে টিকেএস হেলথকেয়ার লিমিটেডকে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে কাজ শুরু করার অনুমোদন দেওয়া হলো।
কিন্তু ছড়িয়ে পড়া পরিপত্রের তথ্য সর্বাংশে মিথ্যা ও গুজব বলে নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া।
এ বিষয়ে ২০ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) এক চিঠিতে বলেন, করোনাভাইরাস শনাক্তে যে ৭৮টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেখানে এই প্রতিষ্ঠানের (টিকেএস) নাম নেই। কর্মকর্তা ডা. মো. মাহামুদ উল্লাহ এ প্রতিষ্ঠানে তদন্তে যান। ওই ভুয়া পরিপত্রে উল্লিখিত ঠিকানায় (১৬৬-১৬৭ দ্বিতীয় তলা, আল রাজি কমপ্লেক্স, কাজী নজরুল ইসলাম সরণি) গিয়ে তিনি দেখেন এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে দৈনিক আড়াই হাজার টাকা বেতনে ৫১০ জনের চাকরির বিজ্ঞাপন ফেসবুকে দিয়েছে তপু ও মিলন নামে দু’জন।যোগাযোগের ঠিকানা হিসাবে তাদের ফেসবুক আইডি এবং দুটি মোবাইল নম্বরও দেওয়া হয়।
এ দুজনের ফেসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কোভিড-১৯ র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের জন্য কিছু সংখ্যক লোক ৯০ দিন মেয়াদে নিয়োগ দেয়া হবে।
যাদের কাজটা খুবই প্রয়োজন শুধু তারাই যেন নক করেন। বরিশাল বিভাগ বাদে বাকি বিভাগ, জেলা ও উপজেলায় একজন করে মোট ৫২০ জন লোক প্রয়োজন। বেতন ২৫০০ টাকা প্রতিদিন।আগ্রহীরা ফ্রমের মাধ্যমে অ্যাপ্লিকেশন করতে হবে। প্রার্থীকে অবশ্যই নিজ জেলা, উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
যোগাযোগ: মিলন-০১৭৭৩৭৯২৭৬৭ তপু-০১৭৭৫৬৬৬৩৩৮
চাকরির বিষয়ে জানতে শুক্রবার দুপুরে কথা হয় তপুর সঙ্গে। তিনি প্রথমে এ প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান আমি কোন ব্যাচের। এরপর তিনি বলেন, অধিদপ্তরে এ বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রয়োজন। তবে লোক নেওয়া হবে তাদের মাধ্যমে। তারপর সাংবাদিকের পরিচয় প্রকাশ করলে তিনি বলেন, অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করে বিস্তারিত জানাবেন। তারপর থেকে ফোন বন্ধ।