গাইবান্ধার ফুলচাষিরা গত বছরের করোনাকালের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবারও জমিতে গাঁদা, গোলাপ ও রজনীগন্ধা সহ নানা প্রজাতির ফুল চাষ করেছেন। কিন্তু এ বছরও করোনার হানায় ভালোবাসার ফুল বাগানেই শুকিয়ে যাচ্ছে। টানা দুই সপ্তাহের লকডাউনে ক্রেতা আর দাম না পাওয়ায় পথে বসার অবস্থা আবস্থা গাইবান্ধার ফুল চাষীদের। অনেকেই অর্থের অভাবে ঠিকমতো ঔষুধ ও বালাইনাশক প্রয়োগ না করায় গাছগুলো শুকিয়ে ভালোবাসার ফুল বাগানেই নষ্ট হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমে গড়া ফুলের বাগান তুলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অনেকে।
সরেজমিনে কথা হয় মলয় কুমার লিটনের সঙ্গে। তিনি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা তিনি আরএমসি টিভির সাংবাদিককে জানান, গত বছর করোনায় ফুল বিক্রি করতে না পেরে ৮ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ধারদেনা করে এ বছর সাত বিঘা জমিতে ৯ লাখ টাকা খরচ করে ফুল চাষ করি। কিন্তু এ বছরও করোনাভাইরাস হানা দিয়েছে। লকডাউনে বিয়ে থেকে শুরু করে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান না হওয়ায় ফুল বিক্রি বন্ধ রয়েছে। আয় না থাকায় শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছি না আবার জমিতে ঔষুধ ও বালাইনাশক প্রয়োগের অভাবে বাগানের ফুল বাগানেই নষ্ট হচ্ছে।
গত বছর সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা ও কৃষি ঋণ দিয়েছে। আপনি পেয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে লিটন বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা কৃষি কর্মকর্তা সরকারি প্রণোদনা বা অনুদান দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। বাস্তবে একটি টাকাও পাইনি আমরা। তিনি সরকারের কাছে এ বছর প্রকৃত ফুলচাষিসহ ক্ষতিগ্রস্ত কৃৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান
শুধু লিটন নয়, জেলার ৪ শতাধিক ফুলচাষির একই অবস্থা। হঠাৎ করে আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন তারা। লকডাউনের এই সময়টাতে কৃষকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলার ফুলচাষিরা।
এদিকে সাঘাটা উপজেলার জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত কৃষক আমীর আলী গেল বছর করোনাভাইরাস এবং বন্যার কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিক্রি না হওয়ায় টমেটো এবং করলা জমিতে নষ্ট হচ্ছে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। পরে জেলা প্রশাসক আব্দুল মতিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সহ জেলা কৃষি অফিসার আমীর আলীকে প্রণোদনা ও ঋণ সহায়তার আশ্বাস দেয়। কিন্তু এক বছর পার হলেও সরকারি কোন সাহায্য সহযোগিতা কিংবা ঋণ পায়নি আমীর আলী। টাকা না থাকায় এ বছর জমিতে ফসল লাগাতে পারেননি তিনি।তিনি অভিযোগ করে বলেন, এ অঞ্চলের প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক কৃষি বিভাগের কোন প্রণোদনা পায় না।
কৃষক আমীর আলীর প্রণোদনার ব্যাপারে জানতে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে গেলে উপপরিচালক মাসুদুর রহমানকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন সাংবাদিককে বলেন, আমির আলীর কৃষি ঋণের বিষয়ে কৃষি ব্যাংককে জানানো হয়েছে। কেন কী কারণে ঋণ পায়নি তা জানা নেই। তবে আমার মনে হচ্ছে, আগের ঋণখেলাপির কারণে তাকে ব্যাংক থেকে টাকা দেয়নি।