পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকার গভীর নিম্নচাপটি পশ্চিম-উত্তর পশ্চিম দিকে সরে আরো ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়েছে।
ঝড়ের কারণে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপের নির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী এ ঘূর্ণিঝড়ের নাম ‘ইয়াস’; এটি ওমানের দেওয়া নাম।
সোমবার সকালে জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান খান বলেন, ঘূর্ণিঝড়‘ইয়াস’ চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে; কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে; পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেন, সোমবার ভোর ছয়টায় নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়।
“ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর- উত্তর পশ্চিমে অগ্রসর হতে পারে। ২৬ মে বুধবার নাগাদ উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে পৌঁছতে পারে ঘূর্র্ণিঝড়টি।”
নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার; যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সাগর উত্তাল থাকায় সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
নিম্নচাপটি এখন ‘গভীর নিম্নচাপ’
দেশজুড়ে তাপদাহের মধ্যে শনিবার বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, ওই রাতে সেটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে রূপ নেয়। রোববার বেলা বারোটার দিকে সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়। মধ্যরাতে তা গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়।
সোমবার এটি আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এ পরিণত হলো। বুধবার তা উপকূল অতিক্রম করার পূর্বাভাস রয়েছে। উপকূল অতিক্রমকালে বৃষ্টি ঝরিয়ে তা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাবে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে সবশেষ গেল বছর ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানে।
প্রস্তুতি
ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সরকার ইতোমধ্যে প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে।
রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “আমরা আবার সবাইকে সতর্ক করছি। আরেকটা ঘূর্ণিঝড় কিন্তু আসছে। …আর সেই বিষয়ে পূর্ব সতর্কতা আমরা নিতে শুরু করেছি। ইনশাল্লাহ এতে আমরা সতর্ক থাকব, এই ঝুঁকি হ্রাস করতে পারব।”
যেকোনো দুর্যোগে ঝুঁকি কমানোর জন্য সবাইকে সচেতন ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবেলায় এবারও স্বাস্থ্যবিধি মেনে তিন গুণ আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান।
মাঠ পযায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। সোমবারও প্রস্তুতি কমিটির সভা রয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “উপকূলীয় এলাকায় শতভাগ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে হবে। যে করেই হোক সবাইকে শেল্টারে আনতে হবে, একজনকেও রেখে আসা যাবে না। এবার আমরা টার্গেট রাখব, মৃত্যুহার যেন জিরো হয়।”
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের আগে দেশের সব বিভাগে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টানা কয়েক দিন ধরে অহসনীয় গরমে অস্বস্তিকর অবস্থা জনজীবনে।
রোববার খুলনায় দেশের সর্বোচ্চ ৩৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এ অবস্থায় বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে ঝড়ো-বৃষ্টির আভাসও রয়েছে।