কিছুদিন আগের ঘটনা। করোনা পজিটিভ এক রোগী তার প্রতিবেশীদের বিভিন্ন কটুক্তি আর তীর্যক দৃষ্টি সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করলেন। আচ্ছা, আমরা কি মানুষ? ১ম করোনার ঢেউয়ে আমাদের পুরো পরিবার যখন পজিটিভ হলাম, যে বাড়ি থেকে গরুর দুধ নিতাম সেখান থেকে বলে পাঠানো হল, আমাদের আর দুধ দেওয়া হবে না। গ্রামের এক মোড়লের বাড়ির পাশ দিয়ে আমার এক প্রতিবেশী যাচ্ছিলেন, তাকে বলে দেওয়া হল, সে যেন ঐ রাস্তা দিয়ে আর না যায়। আর এই মানুষগুলোই করোনা পজিটিভ হওয়ার আগে বিভিন্ন অসুখ বিসুখে দিনে-রাতে আমাদের বাড়িতে এসেছেন চিকিৎসা পরামর্শ নেওয়ার জন্য। অথচ আমরা পজিটিভ হওয়ার পর থেকে বাড়ির দরজা নিজেরাই আটকে রাখতাম, বাইরে যেতাম না। কোন প্রয়োজনে শুভাকাঙ্ক্ষী কাউকে মোবাইলে জানাতাম, সে বাড়ির সামনে এসে প্রয়োজন মিটিয়ে যেত।
আচ্ছা বলুনতো, আমরা বাইরে বের হবার সময় মন থেকে মাস্ক পরি কতজন? পুলিশ, প্রশাসন যদি সজাগ না থাকত, মাস্ক কি জিনিস সেটাই হয়ত চিনতাম না। আর আমরা এই জনগনই যখন কেউ পজিটিভ হয়, তখন তার দিকে তীর্যক দৃষ্টি দেই, কটু কথা বলি। কেন? নিজেদের মনুষ্যত্ব, বিবেক আজ কোথায়? আজ অন্য কেউ করোনা পজিটিভ, আপনি কাল পজিটিভ হবেন না, কেউ কি এমন নিশ্চয়তা দিতে পারবেন? পারবেন না। একটা গরম খবর বলি, চুয়াডাঙ্গা কিছুদিনের মধ্যে রেড জোন ঘোষিত হতে যাচ্ছে। এখন প্রতিদিনই অনেক রোগী অনেক খারাপ অবস্থায় আমাদের হাসপাতালে আসছেন, যাদের চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা আমাদের হাসপাতালে নেই। যার ফলে, তাদেরকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের করোনা ডেডিকেটেড চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিতে হচ্ছে। সেখানে ৫০ বেডের ব্যবস্থা থাকলেও প্রতিদিন প্রায় ৭০/৮০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। তাই বেডের অতিরিক্ত রোগীদের মেঝেতে শুয়ে/বসে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এখনই এই অবস্থা। ভবিষ্যৎ এ কি হতে পারে আপনি নিজেই অনুমান করার চেষ্টা করুন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, জনগন সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা না করলে অচিরেই বাংলাদেশের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হতে চলেছে।
তাই, আসুন না আমরা একটু সচেতন হই। করোনা প্রতিরোধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করি (করোনা প্রতিরোধে কি করবেন তা আজ বলা বাহুল্য)। কারো করোনা পজিটিভ হলে তার প্রতি তীর্যক দৃষ্টি আর কটু কথা নয় বরং তার দিকে সাহায্যের হাত প্রসারিত করে বলি, ” আপনার বাইরে বের হওয়া লাগবে না। আপনি ঘরে থাকুন। কোন প্রয়োজনে আমাদেরকে বলবেন। আমরা আপনার পাশে আছি” আর সর্বোপরি, আমাদের স্রষ্টা মহান আল্লাহর কাছে আমাদের জবাবদিহিতার কথা স্মরণ করে কারো প্রতি যেন অন্যায় না করি, আমরা যেন মানুষ হই….
ডাঃ মোঃ নাজমুল হুসাইন
মেডিকেল অফিসার
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা।