সুনামগঞ্জ জেলাজুড়ে যখন বৈশাখী ধান কাটার উৎসব তখন হতাশা ও ক্ষোভে ধানের জমিতে আগুন দিয়েছেন বলে এক কৃষক সন্তান রনি দাসের দাবি । সম্প্রতি জেলার শাল্লার উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের চাকুয়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। বর্গা নিয়ে চাষ করা জমির পুরো ধান নষ্ট হওয়ায় চাকুয়া গ্রামের কৃষক নিশিকান্ত দাশের ছেলে রনি দাস মনের দুঃখে আগুন দিয়ে প্রায় দেড় বিঘা (কেদার) ধান পুড়িয়ে দিয়েছেন। তবে এলাকার অনেক কৃষক বলছেন, এক ধরনের পোকার আক্রমণের শিকার হয়েছে এরকম উপজেলার বহু জমি। এই জমিটি মনে হয় সেরকমই হবে। তবে এর জন্য জমিতে আগুন দেয়াটা সঠিক হয়নি বলে তাদের অভিমত। আবার অনেকেই ফেইসবুকে লিখেছেন ভাইরাল হওয়ার জন্যই রনির এ কান্ড। আবার কেউ কেউ লিখেছেন সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে রনি দাস জমিতে আগুন দিয়ে ভিডিও করে ছড়িয়ে দিয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা জরুরি বলে সচেতন মহল মনে করছেন।
বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) ধানে আগুন দেয়ার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
জমিতে আগুন দেয়া কৃষক সন্তান রনি দাস হতাশার কণ্ঠে বলেন, আমাদের ৬ বিঘা জমি ছিল। সেই জমি বন্ধক রেখে টাকা এনে বোনের বিয়েতে খরচ করেছি। এখন অন্যের জমি বর্গা চাষ করি। এবার গ্রামের অসীম সিংহের ৫ বিঘা জমি নগদ ১৭ হাজার টাকায় বর্গা চাষ করেছি। সার-বীজ ও চাষসহ প্রায় ১০ হাজার খরচ হয়েছে। ৪৪ জাতের হাইব্রিড ধান চাষ করেছিলাম। আশা ছিল অন্তত ১০০ মণ ধান পাব। কিন্তু কপাল খারাপ সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, ১৫-২০ দিন আগে যখন জমির ধান সাদা হয়ে মরার মত হচ্ছিল তখন গ্রামের মেম্বারকে জানিয়েছি। তবে ভুল করে কৃষি বিভাগকে জানানো হয়নি। দিরাই থেকে কীটনাশক এনে দিয়েছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তাই মনের দুঃখে ধানে আগুন দিয়েছিলাম। তবে বাবার বাধার কারণে সব ধান পুড়ানো সম্ভব হয়নি। ধান নষ্ট হওয়ায় সরকারি কোনো সহায়তা না পেয়ে গরু বিক্রি করে কিছু ধান কিনেছি।
চাকুয়া গ্রামের বাসিন্দা হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শিথিল চন্দ্র দাস বলেন, নিশিকান্ত দাসের জমির ধান নষ্ট হওয়ার বিষয়টি উপ-সহকারী কৃষি অফিসার জয়ন্ত বাবুকে জানিয়েছি। তাদের সহায়তা দেয়ার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে কথা বলেছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারকেও বিষয়টি অবগত করেছি।
এলাকার আনন্দপুর গ্রামের কৃষি প্রেমিক দক্ষ কৃষক বিকাশ চক্রবর্ত্তী বলেন, ফেইসবুকে চাকুয়ার রনি দাসের জমিতে আগুন দেয়ার বিষয়টি দেখেছি। এরকম অনেক জমিই পোকার আক্রমণে এলাকায় নষ্ট হয়েছে। কীটনাশকেও কাজ হয়নি। এর জন্য জমিতে আগুন দিতে হবে কেন? এর পিছনে তার অন্য কোন মনোভাব রয়েছে কি না তদন্ত করা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।
শাল্লা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুবিন চৌধুরী বলেন, গত ৪ এপ্রিল গরম হওয়ার কারণে বিভিন্ন এলাকায় বোরো ধানের ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। যারা আমাদের কাছে এসেছেন ও আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি তাদের পরামর্শ দিয়েছি। চাকুয়া গ্রামের কৃষক নিশিকান্ত দাসের জমির বিষয়টি জানা যায়নি। আমরা সরেজমিনে গিয়ে জমিটি দেখব।
শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মুক্তাদির হোসেন বলেন, চাকুয়া গ্রামের একজন কৃষকের পুরো জমির ধান নষ্ট হয়ে যাওয়া ও আগুন দেয়ার ঘটনাটি কেউ আমাদের জানায়নি। খুব শিগগিরই খোঁজ নেয়া হবে।