দৃশ্যপট-১।
নূরজাহান তিসি, পিতা- নূর মোহাম্মদ, কুড়ুলগাছি ছোট্ট সন্তানের হাত ধরে কুন্ঠিতচিত্তে দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে। জিজ্ঞাসা করলাম কি করো???? বললো, চুল বাছি, আর কাঁথা সেলাই করি। সেলাই এর কাজ ভালোভাবে জানলেও সেলাই মেশিন কিনতে পারিনি। স্বামী কি করে জানতে চাইলে বাঁধভাঙ্গা আবেগ যেন জেঁকে ধরলো তাকে। ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো, চোখমুখ লাল হয়ে গেল। বুঝলাম এ আবেগ যত না কষ্টের তার চেয়েও অধিক অপমানের। আমাদের সমাজে এখনও ‘স্বামী পরিত্যক্তা ‘ শব্দটা অত্যন্ত অপমানের, কষ্টের, আর বঞ্চনার। নারীরা বৈধব্যের যন্ত্রণা বুকে চেপেও মেনে নেয় তার সংগ্রামমুখর জীবনকে। কিন্তুু যে নারী স্বামী পরিত্যক্তা সে বেঁচে থেকেও মৃত। তার অপমানকে ঢেকে রাখার সব পথ যেন বন্ধ, এ দায় যেন সবটুকু তার একার। কি অবলীলায় সন্তানের দায় এড়িয়ে সেইসব কুলাঙ্গার পিতারা অন্য স্ত্রীর সাথে সুখের সংসার করছে। অথচ, স্নেহময়ী জননী নিজে না খেয়েও সন্তানের মুখে অন্ন তুলে দেন। স্বপ্ন দেখেন তার সন্তান একদিন তার অন্ধকার জীবনে আলো দেখাবে।
আজ স্বামী পরিত্যক্তা নূরজাহান কে একটি সেলাই মেশিন উপহার দেওয়া হলো। আমি সম্মান জানাই হাজারো নূরজাহানকে। ঘৃণা এবং ধিক্কার জানাই সেইসব পুরুষকে যারা মানুুষ হয়ে জন্ম গ্রহণ করেও মনুষ্যত্বহীন, যারা স্ত্রী-সন্তানকে আস্তাকুঁড়ে ফেলে দিতে দ্বিধা বোধ করেনা।
নূরজাহান যেন এই সেলাই মেশিন দিয়ে আত্নসম্মানের সাথে উপার্জন করে সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে। তার সন্তান যেন বড় হয়ে প্রদীপ্ত শিখার ন্যায় তার মায়ের জীবনকে আলোকিত করতে পারে।
দৃশ্যপট-২।
এবার বলবো আরেক নারীর ত্যাগের গল্প। লিপি খাতুন, স্বামী: মিন্টু, কুড়ুলগাছি এর স্বামী প্রতিবন্ধী। অথচ মমতাময়ী লিপি পরম মমতায় জড়িয়ে রেখেছেন তার স্বামী সংসার। নাই কোন অনুযোগ, অাফসোস। হাসিমুখে জয় কর নিয়েছেন তার সংগ্রামী জীবনকে। তার ভাঙ্গা ঘর চাঁদের আলোয় ভরা।
বসবাস অযোগ্য হওয়া ঘরে যেন কোনরকম বাস করতে সেজন্য প্রয়োজন টিন। আজ ২ বান্ডিল টিন এবং ৬ হাজার টাকার চেক দেওয়া হলো লিপি খাতুনকে।
হাজার বছর বেঁচে থাক লিপি খাতুন। মনুষ্যত্বের মশাল জ্বলিয়ে আমাদের সমাজকে আলোকিত করুক যুগের পর যুগ।