সকল ঝল্পনা,কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে কোপা আমেরিকার ফাইনালে ডিফেন্ডিং চ্যাস্পিয়ন ব্রাজিলকে পরাজিত করে দীর্ঘ ২৮ বছর পর কোনো মেজর ট্রফি জিতে চ্যাস্পিয়ন হলো আকাশী-নীল আর্জেন্টিনা। বাংলাদেশ সহ সমগ্র বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল, ক্রিকেট ইত্যাদি খেলা।
বিশ্বকাপ ফুটবল,কোপা আমেরিকা,ইউরো কাপ ফুটবল ইত্যাদি খেলাগুলোর উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে সমগ্র বিশ্বব্যাপী।বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ লোকের কাছে এ দুটি দল অত্যাধিক জনপ্রিয়।
১১ জুলাই সকাল ৬ টায় ব্রাজিলের রিওডেজেনিরিও এর মারাকানা স্টেডিয়ামে সেই মহাকাব্য রচিত হয়েছে। কে বা কারা হবে সেই মহাকাব্যের নায়ক, কাদের মাথায় যাবে শিরোপার মুকুট, সেলেকাওরা কি পারবে মুকুট ধরে রাখতে, নাকি আকাশী নীলরা ছিনিয়ে নিয়ে যাবে, এ নিয়ে এতদিন চলছিল ঝল্পনা-কল্পনা,অবশেষে সকল ঝল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শিরোপার মুকুট পুনরুদ্ধার করেছে আকাশী নীলরা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এ খেলা নিয়ে তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই ঘটে যাচ্ছে অনাকাংখিত ঘটনা। দুঃখজনক হলেও সত্য,দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাধারণ খেলা নিয়ে বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।
ব্রাজিল,আর্জেন্টিনা সমর্থকদের মধ্য সহিংসতার কারণ কী?
ব্রাজিলের প্রায় সমর্থকদের মতে আর্জেন্টিনা কোনো দলই না আবার আর্জেন্টিনার প্রায় সমর্থকদের মতে ব্রাজিল কোনো দলই না।এভাবেই শুরু হয় তর্ক-বিতর্ক,এক পর্যায়ে খেলা ছেড়ে ব্যক্তিগত,পারিবারিক,সামা-জিকভাবেও একে অন্যকে করে ব্যক্তিগত আঘাত,কাঁদাছুড়াছুড়ি,
গালাগালি একপর্যায়ে হাতাহাতিতে পরিণত হয়।তর্কের শুরুটা হয় মজা থেকে,একটা পর্যায়ে মজা,কাঁদাছুড়াছুড়ি যখন সকল মাত্রা অতিক্রম করে তখনই শুরু হয় সহিংসতা।মজাটা ততক্ষণই মজা ও সুন্দর থাকে যখন সবকিছু মাত্রার মধ্যে থাকে,তখনই অসুন্দরে পরিণত হয় যখন মজা,তর্কটা সকল মাত্রা অতিক্রম করে কাঁদাছুড়াছুড়িতে পরিণত হয়।
বাংলাদেশের সমর্থকদের মধ্যে এত সহিংসতা কেন?
সম্প্রতি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থকরা সাধারণ খেলাকে কেন্দ্র করে,ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় বিভিন্ন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়েছে,যা আর্জেন্টিনার গণমাধ্যম সহ বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।যা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। জাতি হিসেবে বর্হিঃবিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।দুঃখজনক হলেও সত্য ব্রাহ্মবাড়িয়ায় ষাট উর্ধের বয়সি নওয়াব নামে এক বৃদ্ধকেও ছাড় দেয়নি।বৃদ্ধ নওয়াবের দোষ ছিল সে ব্রাজিল সমর্থকের চাচা।পরবর্তীতে আবার ব্রাজিল সমর্থকরাও আর্জেন্টিনার সমর্থকদের পিটিয়েছে।এই যে সহিংসতা তা কিন্তু অত্যন্ত লজ্জাজনক, বেকুব জাতি হিসেবে বর্হিঃবিশ্বে আমাদের উপস্থাপন করছে।একটা ভিন্ন মহাদেশ,ভিন্ন জাতি,হাজার হাজার মাইল দূরের দেশের খেলা নিয়ে নিজেরা ভাইয়ে ভাইয়ে এত সহিংসতা কখনো কাম্য নয়।আজকে কোপা আমেরিকার ফাইনালের পরে মেসি,নেইমারের আলিঙ্গন আমাদের যে বার্তা দিয়েছে তা থেকে শিক্ষা নিতে হবে।আমরা অযথা কাঁদাছুড়াছুড়ি করি অথচ যাদের জন্য করি তাদের পরস্পরের প্রতি যথেষ্ট সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে।
বাংলাদেশী সমর্থকদের মধ্যে এত উগ্রতার কারণ কি?
বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল লীগের ঢাকা বনাম আবাহনীর খেলায় অনেক উত্তাপ ছিল তা কালের সাথে পরিবর্তিত হয়ে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দ্বন্ধে রুপ নিয়েছে।এর অন্যতম কারণ খুজে পাওয়া যাবে ফিফা র্র্যাংকিং এর দিকে তাকালেই যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ২১০ দেশের মধ্যে ১৮৩ তম।আজ যদি আমাদের ফুটবল দল থাকতো তাহলে আমরা এতোটা বিভাজিত,উগ্র হয়তো হতাম না।
আমরা বাংলাদেশীরা ক্রিকেট নিয়ে সহিংসতায় জড়ায় না কেন?
এর কারণ হলো আমাদের ক্রিকেট দল ইতিমধ্যেই তাদের শক্তি মত্তার পরিচয় দিয়ে ক্রিকেট র্র্যাংকিং এ ৭ নম্বর অবস্থান অর্জন করেছে।যা আমাদের জাতি হিসেবে সম্মানিত করে।আর আমরা এক বাক্যে দল মত নির্বিঃশেষে প্রায় ১৭ কোটি বাংলাদেশী সবাই ক্রিকেটে এক হয়ে নিজ দেশকে সমর্থন করি।কিন্তু ফুটবলে আমরা সেই অবস্থান তৈরি করতে পারিনি বিধায় সেই জায়গায় ব্রাজিল,আর্জেন্টিনা সহ অন্যান্য দেশ জায়গা করে নিয়েছে।
আমরা আশাবাদী একদিন সকল সহিংসতার অবসান ঘটবে,ক্রিকেটের মত ফুটবলেও আমাদের নিজস্ব দল থাকবে। খেলাটাকে ৯০/১২০/১৩০ মিনিট এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে খেলাটা খেলার জায়গায় রেখে সকলে মিলে উপভোগ করি, করবো এটাই কাম্য।এই উত্তাপ যেন কোনোভাবেই ব্যক্তি,পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে না ছড়িয়ে পরে।দীনশেষে কিন্তু আমরা একে অপরের ভাই,বন্ধু,আত্তীয়।এই আত্তার বন্ধন,বাঙালি জাতির,ইতিহাস, ঐতিহ্য,সংস্কৃতি খেলাদুলা ভাইয়ে ভাইয়ে আন্তরিকতা,বন্ধুত্ব ইত্যাদি কোনো সম্পর্কই যাতে সাধারণ খেলার জন্য নষ্ট না হয় সেই কামনাই করি।খেলা ছাড়াও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে শুধু খেলা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক সৃজনশীল কাজে সকলেই যে যার কাজে মনোনিবেশ করলে পরিবার,সমাজ,দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনা যে কোনো আসরে যে কোনো খেলায়,যেই চ্যাম্পিয়ন হোক না কেন তা আমাদের পরিবার,সমাজ,দেশ ও জাতির জন্য কোনোই কাজে আসবে না শুধু একটু মানসিক তৃপ্তি ছাড়া।যাই হোক সকলের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক,দিনশেষে ভ্রাতৃত্ব,বন্ধুত্ব,আত্তীয়তার বন্ধন সুদৃঢ় হোক।
লেখক:
মোঃ মাসুম বিল্লাহ, বিবিএ, এমবিএ
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ,জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।