সদরসহ চার উপজেলার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী
সুনামগঞ্জ আব্দুজ জহুর সেতু।
সেতুটি দীর্ঘ ও প্রশস্ত হওয়ায় এই সেতুর উপরে এখন গড়ে উঠেছে অস্থায়ী সিএনজি স্ট্যান্ড। এতে এই এলাকায় দূর্ঘটনার আশংকা বেড়েছে। সিএনজি স্ট্যান্ড’র কর্তৃপক্ষ বলছেন, পুলিশ সুপারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই সেতুর উপরে অস্থায়ী সিএনজি স্ট্যান্ড বসিয়েছেন তারা। সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার বললেন, ‘এই দাবি একেবারেই অসত্য ও ভিত্তিহীন।’
সরজমিনে দেখা যায়, সেতুর নিচের একদিকে মল্লিকপুর এলাকায় একটি সিএনজি স্ট্যান্ড রয়েছে। এই স্ট্যান্ডটি জেলার বিশম্ভরপুর, তাহিরপুর ও ধর্মপাশার যাত্রীরা ব্যবহার করেন। অপরদিকে নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আরেকটি সিএনজি স্ট্যান্ড আছে, এই স্ট্যান্ডটি জামালগঞ্জ ও সাচনা এলাকার যাত্রীরা ব্যবহার করেন। নির্ধারিত এই দুটি স্ট্যান্ড থাকলেও সিএনজি নিয়ে তারা সেতুর উপরে এসে অবস্থান নেন। তাদের পাশেই অবস্থান নেন, ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালকরা। এতে সেতুর উপরের প্রসস্ততা সংকোচিত হয়ে গেছে।
মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ ও সাবেক সাংসদ আব্দুজ জহুর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অগ্রভাগের একজন সংগঠন ছিলেন। ২০০৭ সালের ২২ মে মৃত্যু বরণ করেন তিনি। এই প্রবীণ রাজনীতিবিদের নামে নামকরণ করা হয় সুনামগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটির।
প্রায় ৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাটি এলাকার বহু দিনের কাক্সিক্ষত সুরমা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন। এরপরেই হাওর জনপদ বিশ^ম্ভরপুর, তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও জামালগঞ্জ উপজেলার মানুষের দুর্ভোগ কমে যায়। তবে উদ্বোধনের এক বছরের মাথায় সেতুতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে লেগুনা-সিএনজি চালকদের সঙ্গে ভাড়াটে মোটর সাইকেল চালকদের সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষের জের ধরে তাদের সংগঠনের মালিকপক্ষ সেতুর উপর ভাগ করে দেয়। সেই ভাগ অনুযায়ী সারাদিন একপাশে অবস্থান করে সিএনজি ও আরেক পাশে ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল।
এবিষয়ে সিএনজি চালক ও ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালকদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য রয়েছে। সিএনজি চালকরা বলছেন, সেতুর নিচের স্ট্যান্ডে অবস্থান করলে যাত্রী মিলে না। যাত্রীরা সরাসরি এসে সেতুর উপরে চলে আসে। কারণ মোটর সাইকেল চালকরা সেতুর উপরে সবসময় অবস্থান করে।
আর মোটর সাইকেল চালকরা বলছেন, তাদের নির্ধারিত মোটর সাইকেল রাখার জায়গা সেতুর পশ্চিম পাড়ে। শহর থেকে সেতুর পশ্চিম পাড় অনেক দূর হওয়ায় কোনো যাত্রী পান না তারা। শহরের কাছেই দুটি সিএনজি স্ট্যান্ড হওয়ায়, সব যাত্রী সিএনজি দিয়ে চলে যায়, তাই তারা সেতুর উপরে অবস্থান করেন।
সিএনজি চালক কাশেম মিয়া বললেন, মল্লিকপুরে আমাদের সিএনজি স্ট্যান্ড আছে, সেখানে থাকলে কোনো যাত্রী পাওয়া যায় না। কারণ সব যাত্রী সরাসরি চলে আসে সেতুর উপরে। তাই আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি।
পলাশ এলাকার সিএনজি চালক নিজাম মিয়া ও আলামিনের বক্তব্য একই ধরনের। তারাও বললেন নির্ধারিত জায়গায় থাকলে ট্রিপ পাওয়া যায় না। এতে আরও লোকসান। তাই সেতুর উপরে এসে অবস্থান নেই। ভাড়াটে মোটর সাইকেল চালকদের ব্যাপারে তাদের বক্তব্য, মোটর সাইকেল চালকরা যদি তাদের নির্ধারিত জায়গায় থাকতো, তাহলে কোনো অসুবিধা হতো না। আমরা নিজেরাও নির্ধারিত জায়গায় সিএনজি নিয়ে থাকতে পারতাম।
ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালক জুনায়েদ আহমদ জনি বললেন, সিএনজি নিয়ে তারা সেতুর উপরে থাকে, আমরা নিচে থাকলে যাত্রী পাবো না, সব যাত্রী তারাই পাবে, তাই আমরাও সেতুর উপরে অবস্থান নেই।
মোটর সাইকেল চালক জাহাঙ্গীর আলম বললেন, সমিতির নেতারা সীমানা ভাগ করে দিয়েছেন। তাদের সীমানা হয়ে যাত্রী আসতে হয় আমাদের কাছে। এ কারণে সব যাত্রী তারাই পায়। আমরা একটু সামনে গেলে মোটর সাইকেলের চাবি রেখে দেয়, প্লাগ খুলে ফেলে।
সিএনজি স্ট্যান্ডের ম্যানাজার ফজর আলী বললেন, যাত্রীদের এমন অভ্যাস হয়েছে তারা সরাসরি সেতুর উপরে চলে আসে। আর মোটর সাইকেল চালকরাও সেতুতে থাকে। এতে আমরা কোনো যাত্রী পাইনা। পরে এসপি স্যারের কাছ থেকে আমরা সেতুতে সিএনজি রাখার অনুমতি এনেছি। তবে বেশি না, শুধু মাত্র সিরিয়ালের সিএনজিগুলো সেতুর উপরে থাকে। বাকী সিএনজি সেতুর নিচে নির্ধারিত স্ট্যান্ডে থাকে।
সেতুতে সিএনজি রাখার অনুমতি দেবার বিষয়টি একেবারেই অসত্য ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, তারা অবৈধভাবে সেতুর উপরে সিএনজি রাখে। আমরা প্রায়ই সেতু থেকে সিএনজি ও মোটর সাইকেল সরানোর জন্য অভিযান পরিচালনা করি। আমরা সরিয়ে চলে আসলে, তারা আবারও চলে আসে। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের সব জায়গায় এটি রয়েছে। মূলত জায়গার অভাব ও লোক বেশির জন্য এরকমটি হচ্ছে।